SIR আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ, এইবার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলো নদিয়ায়, জানুন বিস্তারিত
বর্তমানে কান পাতলে শোনা যায়, বিভিন্ন মানুষের মধ্যে একটাই বিষয় নিয়ে জল্পনা কল্পনা। আর এই বিষয়টি হল SIR কে কেন্দ্র করে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে চলছে এসআইআর সমীক্ষা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া করার জন্যই এসআইআর সমীক্ষা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বাদেও আরও ১১ টি রাজ্যে এই SIR সমীক্ষা করা হবে। কিন্তু এই ঘটনাকে ঘিরে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে SIR আতঙ্কে। ফের এই ঘটনা ঘটেছে নদীয়ার তাহেরপুরে।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, নদিয়ার তাহেরপুর থানার অন্তর্গত কালীনারায়নপুর পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণচকপুর মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা SIR আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঠিকঠাক মতন খাওয়া দাওয়া করছিলেন না এবং পরিবারের অন্যান্য মানুষদের সাথে ঠিকমতন ব্যবহার করছিলেন না। হঠাৎ করেই এই বৃদ্ধ হার্ট অ্যাটক করেন। পরিবার সূত্রে জানা যায় এসআইআর আতঙ্কের জন্যই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জানা যাচ্ছে, মৃতের নাম শ্যামল কুমার সাহা (৭২)। তিনি মূলত বাংলাদেশের বাসিন্দা হলেও গত ৩০ বছর ধরে ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছিলেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন ফেরিওয়ালা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে শীতের কম্বল বিক্রি করতেন। পরিবারের রোজগারের ভরসা স্থল ছিলেন তিনিও।
পরিবার সূত্রে খবর, SIR ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শ্যামলবাবু খুবই মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন এবং উদ্বিগ্নতার মধ্যে ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকতেন, খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে নিজের এই আতঙ্ক প্রকাশ করতেন। এমনকি প্রতিবেশীদের মধ্যেও তিনি এই আতঙ্কের কথা জানিয়েছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি বলতেন, “আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার আমি আর বাঁচতে চাই না”।
পরিবারের দাবি, SIR আতঙ্কের জন্যই শ্যামল বাবুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের লোকজন এসআইআর কেই দায়ী করছেন শ্যামল বাবুর মৃত্যুর জন্য। শ্যামল বাবুর পরিবারের রয়েছেন দুই ছেলে দুই বৌমা এবং তার স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে শ্যামল বাবুর সমস্ত বৈধ নথিপত্র যেমন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি রয়েছে, এমনকি ২০০২ সালের বাড়ির দলিল রয়েছে কিন্তু ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় শ্যামল বাবুর নাম নেই। এ কারণেই তিনি আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন, কারণ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, তার নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের পর্যায়ে পড়ছিল।
যেহেতু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় যে ব্যক্তির নাম রয়েছে তাদের নাম ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকবে। যদি কোন ব্যক্তি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ভোট দেওয়ার অধিকার না পেয়ে থাকেন তাহলে তার অভিভাবকের নাম থাকলেও তিনি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আর এই নির্দেশের পরেই শ্যামল বাবুর মনে আতঙ্ক দানা বেধেছিল যার পরিণতি হল মৃত্যু।
শুধুমাত্র শ্যামল বাবু নয়, এসআইআর আতঙ্কের মধ্যে আরও অনেক ব্যক্তির ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ৫০ সদস্যের দাবি, প্রশাসনের উচিত এই ধরনের আতঙ্ক যাতে না হয় সেদিকে নজর দেওয়া। মানুষের মধ্যে আতঙ্কের অবসান ঘটিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। এই না হলে শ্যামল বাবুর মতন আরও অনেক নিরীহ প্রাণ অকালে হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন গ্রামের সদস্যরা।

